নাদিম আহমেদ অনিকঃ বিদেশে নিজের কর্মস্থল নিশ্চিত লক্ষে দালালচক্রকে নগদ টাকা দিয়ে দেশ থেকে সৌদিআরব গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে বিপাকে পরেছেন দুই যুবক। ভুক্তভেগী দুই যুবক নওগাঁর আত্রাই উপজেলার আটগ্রামের বাসিন্দা মৃত আবুল হোসেন এর ছেলে মোঃ সাইফুল ইসলাম এবং একই এলাকার বাসিন্দা মোঃ আলাউদ্দিন কবিরাজের ছেলে মোঃ আরিফ হোসেন। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী দুই পরিবারের পক্ষ থেকে দালালচক্রের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করে কোন ফলাফল না পেয়ে দালাল চক্রের একই পরিবারের ৩ সদস্যের বিরুদ্ধে গত ১০/১০/২২ইং তারিখে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিঃ ম্যাজিঃ ও আমলী আদালত-০৮ নওগাঁতে অভিন্ন বিবরণের মাধ্যমে আলাদাভাবে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভেগী দুই পরিবারের পক্ষে মোছাঃ রেনোকা ও মোছাঃ বিউটি। যার পর্যায়ক্রমে মামলা নং- জি.আর ১৬৫/২০২২ (আত্রাই) এবং অপর মামলা নং- জি.আর ১৬৬/২০২২ (আত্রাই)। মামলা সূত্রে অভিযুক্তরা হলেন, ১। মোঃ হারুন কবিরাজ (২৭), পিতা- মোঃ হাছেন আলী কবিরাজ, ২। মোঃ হাছেন আলী কবিরাজ (৫২), পিতা- মৃত ইয়ার উদ্দিন কবিরাজ, ৩।মোঃ কাবিল কবিরাজ (২৯), পিতা- মোঃ হাছেন আলী কবিরাজ, সর্ব সাং-আটগ্রাম,থানা- আত্রাই, জেলা- নওগাঁ। মামলায় উল্লেখিত- হারুন কবিরাজ এর বর্তমান ঠিকানা- সহকারী শিক্ষক, কসবা উচ্চ বিদ্যালয়, ব্রাক্ষণবাড়িয়া।পৃথক দুটি মামলা সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত ৩ জন পরস্পর পিতা-পুত্র সম্পর্ক। মোঃ কাবিল কবিরাজ দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে অবস্থান করেন। কাবিলের বাবা হাছেন আলী ও ছোটভাই হারুন কবিরাজ কাবিলের বিদেশে থাকাকে কেন্দ্র বিদেশে লোক পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে মোছাঃ রেনোকা (৩৭) এর পুত্র মোঃ সাইফুল ইসলাম ও মোঃ বিউটির (৩৮) ছেলে মোঃ আরিফ হোসেনকে প্রলুদ্ধ করে। ভুক্তভোগী সাইফুল ও আরিফ তাদের প্রতারণা না বুঝে সরল বিশ্বাসে তাদের কথাই রাজী হয়ে জমিজমা বন্ধকসহ নানান ঋণ করে দুজন দালালদের প্রথমে ৩ লক্ষ টাকা করে মোট ৬,০০,০০০ (ছয় লক্ষ) এবং ফ্লাইট হবার সময় আরও ৩ লাখ করে মোট ৬,০০,০০০ (ছয় লক্ষ) সব মিলিয়ে দুজন ১২,০০,০০০ (বার লক্ষ) টাকা বুঝে দেন। এবং টাকাগুলো মামলার ১নং আসামী ২নং আসামীকে প্রদান করে। পরবর্তীতে মামলার বাদী মোছাঃ রেনুকার’র এর ছেলে সাইফুল ও মোছাঃ বিউটির ছেলে মোঃ আরিফ হোসেন গত ০২/০১/২০২২ ইং তারিখে সৌদিতে পৌছিলে অবস্থানরত মোঃ কাবিল কবিরাজ সাইফুল ও আরিফকে বিমানবন্দর থেকে তার বাসায় নিয়ে আটক করে রাখে। এবং ৬ মাস ধরে সাইফুল ও আরিফ অর্ধাহারে অনাহারে বন্ধি জীবন পাড়ি দেয়। পরে উক্ত বিষয়টি সাইফুল ও আরিফ তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি জানালে ভুক্তভোগী দুই পরিবার টাকা প্রদানের সময় থাকা সাক্ষীদের সহ স্থানীয়দের জানালে সকলের পরামর্শে মামলায় উল্লেখিত আসামী ১/২ নং পর্যায়ক্রমে মোঃ হারুন কবিরাজ ও মোঃ হাছেন আলী কবিরাজের বাসায় উপস্থিত হলে তারা রাগান্বিত হয়ে বলে ”তোমার ছেলেকে চাকুরি অথবা প্রদানকৃত টাকা ফেরত দেওয়া যাবেনা’ পৃথক দুটি মামলার বাদী উল্লেখিত অভিযোগে বিজ্ঞ আদালতে আনয়ন করলে বিজ্ঞ আদালত মামলা দুটি গ্রহণ করে এজাহার হিসাবে আত্রাই থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবর আদেশ প্রদান করলে, অফিসার ইনচার্জ মামলা দুটি রেকর্ড পূর্বক রেনুকার করা মামলার তদন্তভার এস.আই মোঃ রাশেদ আলী ও বিউটির করা মামলার তদন্তভার এস.আই ফরিদ আলীর উপর অর্পন করেন। মামলার তদন্তকারী তদন্তভার গ্রহণ করে ঘটনাস্থলে গিয়ে কাওকে কোন জিজ্ঞাসাবাদ না করে সরাসরি আসামীদের বাড়িতে গিয়ে আসামীদের দ্বাড়া প্রভাবিত হয়ে সম্পূর্ণ একপেষে ও মনগড়া তথ্যগত ভুল মর্মে চুরান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। ভুক্তভোগী সাইফুলের মা মোছাঃ রেনুকা বলেন, আমার ছেলেকে বিদেশে নিয়ে গিয়ে চাকুরি দেবার নাম করে ৬,০০,০০০ (ছয় লক্ষ) টাকা নিয়েছে ৩ দালাল, অনেক কষ্ট করে টাকাগুলে জোগার করেছি। পরে আমার ছেলেকে বিদেশে নিয়ে গিয়ে তারা চাকুরিতো দেয়নী বরং বন্ধি করে রাখে। পরে দালালদের সাথে এলাবাসিদের নিয়ে যোগাযোগ করলে তারা আমাদের টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করে। তাই আদালতে ওদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। কিন্তু এ মামলার তদন্ত অফিসার পরে দালালদের পক্ষেই রিপোর্ট দিয়েছে। দালালরা বিভিন্নভাবে আমাদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। আমরা তাদের টাকা দিয়েছি তার প্রমান আছে। তবে কী আমরা সাধারণ মানুষ এর ন্যায়বিচার পাবোনা? মোঃ আরিফ এর মা মোছাঃ বিউটি বলেন, অনেক কষ্ট করে জমি ভিটা বন্ধক রেখে টাকা জোগার করে দালালদের দিয়ে আমার ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছি। আজ আমরা খেয়ে না খেয়ে ঋণ পরিশোধ করছি। আমার সন্তান বিদেশে গিয়ে অনেক কষ্টে আছে। দালালদের সাথে যোগাযোগ করেও এর কোন ব্যাবস্থা তারা করেনী। তাই আলাদলতের মাধ্যমে তাদের বিচার চেয়ে মামলা করেছি। কিন্তু পরে মামলার তদন্ত অফিসার তাদের পক্ষেই রিপোর্ট পাঠিয়েছে। আমরা অসহায় হয়েগেছি। আমি এই দালালদের বিচার চাই। এ বিষয়ে রেনুকার করা মামলার তদন্দকারী আত্রাই থানার এস.আই মোঃ ফরিদ হোসেন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্তের মাধ্যমে যতটুকু জানতে পেয়েছি ততোটুকুই আমার দেওয়া রিপোর্টে উল্লেখ করেছি।বিউটির করা মামলার তদন্ত অফিসার আত্রাই থানার এস.আই মোঃ রাশেদ আলী বলেন,এ বিষয়ে তদন্তের মাধ্যমে যতটুকু সত্যতা পর্যবেক্ষণে উঠেএসেছে তা চুরান্ত রিপোর্টে পাঠানো হয়েছে।#