মুসলিম উম্মাহর কাছে বিশেষ মর্যাদা রাখে যে দিনগুলো তার একটি হলো শুক্রবার বা জুমার দিন। সপ্তাহের অন্য দিনগুলোর মধ্যে এর গুরুত্ব ও মর্যাদা এতো বেশি যে একে সপ্তাহের ঈদের দিন বলা হয়েছে। জুমা নামে পবিত্র কোরআনে একটি স্বতন্ত্র সুরা আছে। এদিনে আমলের জন্য ফজিলত রাখা হয়েছে। আওস ইবনে আওস আস-সাক্বাফী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করবে এবং (স্ত্রীকেও) গোসল করাবে, প্রত্যুষে ঘুম থেকে জাগবে এবং জাগাবে, আগে-আগে (মসজিদে যাওয়ার জন্য) প্রস্তুত হবে, বাহনে চড়ে নয় বরং পায়ে হেঁটে মসজিদে যাবে এবং কোনোরূপ অনর্থক কথা না বলে ইমামের কাছাকাছি বসে খুতবা শুনবে, তার (মাসজিদে যাওয়ার) প্রতিটি পদক্ষেপ সুন্নত হিসেবে গণ্য হবে এবং প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে সে এক বছর যাবৎ সিয়াম পালন ও রাতভর সলাত আদায়ের (সমান) সাওয়াব পাবে। (আবু দাউদ: ৩৪৫, মান-সহিহ) জুমার দিন সুরা কাহফ তিলাওয়াত করলে কেয়ামতের দিন তা আলো দিবে এবং দুই জুমার মাঝের সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি শুক্রবার সুরা কাহফ পাঠ করবে, তার পা থেকে আকাশের উচ্চতা পর্যন্ত নুর (আলো) হয়ে যাবে, যা কেয়ামতের দিন আলো দিবে এবং বিগত জুমা থেকে এ জুমা পর্যন্ত তার সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।’(আত তারগীব ওয়া তারহীব: ১/২৯৮) ‘অন্য হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পড়বে, তার জন্যে এক জুমা থেকে আরেক জুমা পর্যন্ত আলোকোজ্জ্বল হবে’ (মুসতাদারেক হাকেম: ২/৩৯৯, বায়হাকী: ৩/২৪৯, ফয়জুল ক্বাদীর: ৬/১৯৮)। আবু দারদা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি সুরা কাহফের প্রথম দিক থেকে দশটি আয়াত মুখস্থ করবে, সে দজ্জালের (ফিতনা) থেকে পরিত্রাণ পাবে’(সহীহ মুসলিম)। তবে, আলেমদের মতে, এটি যে কোনো সময়ের জন্য প্রযোজ্য। শুধু জুমার দিনের জন্যে নির্দিষ্ট নয়। জুমার আরো কিছু আমলের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন আল্লাহর রাসুল (সা.)। তন্মধ্যে কিছু আমল ধারাবাহিক উল্লেখ করা হচ্ছে- এক. গোসল করা। দুই. উত্তম পোশাক পরিধান করা। তিন. সুগন্ধি ব্যবহার করা। চার. মনোযোগের সঙ্গে খুতবা শোনা। এই চারটি আমলের কথা একসঙ্গে একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন- যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে উত্তম পোশাক পরিধান করবে এবং সুগন্ধি ব্যবহার করবে, যদি তার নিকট থাকে। তারপর জুমার নামাজে আসে এবং অন্য মুসল্লিদের গায়ের ওপর দিয়ে টপকে সামনের দিকে না যায়। নির্ধারিত নামাজ আদায় করে। তারপর ইমাম খুতবার জন্য বের হওয়ার পর থেকে সালাত পর্যন্ত চুপ করে থাকে। তাহলে তার এই আমল পূর্ববর্তী জুমার দিন থেকে পরের জুমা পর্যন্ত সব সগিরা গুনাহর জন্য কাফ্ফারা হবে। – (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৩)