মাসুদ রানা,পত্নীতলা প্রতিনিধিঃ নওগার পত্নীতলায় নাদৌড় গ্রামে পঞ্চাশ বছরের ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে মানুষে মানুষে মিলবার জাত-পাত, ধর্মীয় পরিচয় পেছনে ফেলে এমন মিলবার জায়গা আর কোথায়? বাংলার এই মেলা ছাড়া! আর মেলা উপলক্ষে কুটুম স্বজন আসার কমতি থাকে না গ্রামের প্রতিটি বাড়ীতে বাড়ীতে যেন আনন্দের বন্যা শিশু কিশোরদের হৈ হুল্লোড় মুখর হয়ে হঠে আসপাশের এলাকা। গ্রাম বাংলার মানুষ আর তার শৈশবের স্মৃতিতে গ্রামের মেলা জড়িয়ে নেই, এটা হতেই পারে না। গ্রামের শান্ত নিথর জীবনে গ্রামীণ মেলা যেন আনন্দের বন্যা নিয়ে হাজির হয়। দৈনন্দিন জীবনের গণ্ডির বাইরে মেলা যেন একটা দমকা হাওয়া। যেখানে হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা। বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) সকাল হতে রাত পর্যন্ত বসে এই গ্রামীণ মেলা |অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান পাকার পর এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ৫০ বছরের বেশী সময় ধরে নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর ইউনিয়নের নাদৌড় গ্রামের পাশে নাদৌড় কেমারা পুকুর পাড়ে কালি মন্দির চত্বরে হয়ে আসছে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ এ মেলা। প্রতিবছরের অগ্রহায়ন অমব্যশায় বসে এই মেলা। মুলত এখানে কালি পুজা উপলক্ষে এ মেলার আয়োজন করা হয়। তবে নতুন ধান উঠার পরে হয় তাই কেউ কেউ এ মেলাকে নবান্নের মেলাও বলে। বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের আগমন হয় এ মেলায় এই মেলাকে ঘিরে গ্রামীণ মানুষের মধ্য এক অন্য রকম উৎসব আমেজে মুখোর হয়ে ওঠে আসপাশের ১০ গ্রামের মামুষ। নতুন ধান উঠায় বাড়িতে বাড়িতে শীতের পিঠা পুলি, নতুন ধান থেকে পাওয়া চালের পায়েশ রান্না করা হয়।মেলা উপলক্ষে আসপাশের গ্রামের প্রতিটি বাড়ীতেই জামাই মেয়ে নাতি পুতি সহ বিভিন্ন আত্মীয় স্বজন আসা,চলে খাওয়াদাওয়ার ধুম। এক দিনের এ মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন এলাকা থেকে দোকানীরা আগের দিন এসে দোকানে মিষ্টি, বাঁশ, বেত, মাটির তৈরী নকশি পাতিল, মাটির ব্যাংক, পুতুল , কাঠের তৈরী ফার্নিচার, কসমেটিক, খেলনা, বাশি, বেলুন, ঘুর্নি, লোহার তৈরী হাঁসুয়া বটি, চাকু,কাগজের ফুল নানা রকম মুখরোচক খাবারেরর দোকান দিয়ে নানান জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসেন। এখানে মাটির তৈরী হাড়ি,পাতিল, ঢাকোন, প্রদীপ দেওয়া ছোট বাটি, ধুপ জালানো ধুপতীসহ নানা রকম মাটির তৈরি তৈজসপত্র বিক্রি হয় । মেলাতে বাশেঁর তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করতে আসা সুধির পাহান জানান, সারা বছর আমাদের খুব কষ্টে দিন কাটে। এই সময়টা আমরা বিভিন্ন গ্রামের মেলায় বাশেঁর তৈরী বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করি। মেলাতে আমরা বাশেঁর তৈরী কুলা, ঢাকনা, ঝাল ডালা,খইচালা, চালুন, মাছ রাখা খলইসহ বাশেঁর তৈরী নানা উপকরণ বিক্রি করি। প্লাস্টিকের পণ্য বাজারে আসায় আমাদের আয় কমে গেছে। মেলায় মাটির তৈরী খেলনা মাটির ব্যাংক ও নকশী পাতিল বিক্রি করতে আসা সুরেশ পাল বলেন উপজেলার ঠুকুনি পাড়ায় তার বাড়ী প্রতি বছর এ মেলায় আসেন তিনি এবার বিক্রি কম হয়েছে । মেলার এক পাশে বসে বউ মেলা সেখানে নারীরা তাদের পছন্দের কসমেটিক প্রসাধনী কিনেন, গ্রামের পাশে মেলা হওয়ায় সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে গ্রামীন নারীদের কেনাকাটা, বিশেষ করে মাটির ও বাশের তৈরী জিনিস ও কসমেটিক দোকান গুলোতে উপচে পড়া ভীড়। আশপাশের কয়েকটি গ্রামের শত শত নারী পুরুষের মেলায় আগমন ঘটে। মেলা দেখতে আসা স্মৃতি রানী জানান মেলায় এসে আমার খুব ভাল লাগছে কসমেটিক কিনেছি জিলাপি কিনেছি খুব মজা করেছি। মেলা কমিটির সভাপতি শ্রী সনজিৎ কুমার জানান, বাপ দাদার আমল থেকে থেকে এমেলা হয়ে আসছে। তবে ১৯৯৭ সাল থেকে এই মেলা জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে হয়ে আসা নাদৌড় সর্বজনিন কালী মন্দির কমিটির সদস্যরা এই মেলার আয়োজন করে থাকে।এখানে ১৬ হাত উচ্চতার কালী মাতার প্রতিমা তৈরী করা হয়। এ দিন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা অগ্রহায়ন আমবশ্যা উপলক্ষে কালি পুজা অর্চনা করেন এখানে। ধর্ম বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ আসেন এ মেলায়।