গোলজার রহমান,ধামইরহাট প্রতিনিধিঃ নওগাঁ জেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ধামইরহাট উপজেলার আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যান। এই উদ্যানকে পাখিদের অভয়ারণ্য বলা হলেও বন বিভাগের উদাসিনতায় ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে দীঘির পরিবেশ। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় লতা পাতা পড়ে দুষিত হয়ে পড়েছে দিঘির পানি ও এর চারপাশ।
গতকাল বুধবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে সরোজমিনে আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যানে দেখা গেছে এমন চিত্র। যেখানে প্রতিবছর শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে আলতাদিঘীর জলে দাপিয়ে বেড়াতো অতিথি পাখি রাজ সরালি, পাতি সরালি, বালি হাঁস, রাজহাঁস, মান্দারিন হাঁস, গোলাপি রাজহাঁস, ঝুটি হাঁস, চকাচকি, চিনা হাঁস, কালো হাঁস, লালশীর, নীল শির, মানিকজোড়, জল পিপি, ডুবুরি, হারিয়াল পাখিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাংচিল উল্লেখযোগ্য হলেও এ বছর এদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে।
অন্যদিকে আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যান সংস্কার ও উন্নয়নের কথা বলে দীঘির দুই পাড় থেকে কয়েক হাজার গাছ কেটে ফেলায় দিঘির পরিবেশ যেমন হুমকির মুখে পড়েছে ঠিক তেমনি হুমকির মুখে পড়েছে পরিযায়ী পাখিরা।
স্থানীয় ও পর্যটকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শীত মৌসুমের শুরুতে কয়েক হাজার পথ পাড়ি দিয়ে দিঘির পানিতে কলকাকলিতে মেতে উঠতো অতিথি পাখিরা। বর্তমানে গভীরতা কমে যাওয়ার সাথে লতা পাতা পড়ে পানি দূষিত হওয়ায় এর পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। ফলে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর ঝাঁক বেঁধে ছুটে আসা পাখিদের উপস্থিতি কম লক্ষ্য করা গেছে। যে পাখি গুলো এসেছে সেগুলো দিঘির বিষাক্ত পানিতে স্বাধীন ভাবে বিচরণ করতে পারছে না। এমন অবস্থায় দীঘি খননসহ পঁচা পানি সংস্কার করা না হলে আগামীতে পাখিদের বিচরণ কমে যাবে এমনটিই জানিয়েছেন তারা।
উপজেলা বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যান রাজশাহী সামাজিক বনবিভাগের আওতায় নওগাঁ সদর থেকে ৬০ কিলোমিটার দুরে ধামইরহাট উপজেলায় পাইকবান্দা রেঞ্জের অধীনে ধামইরহাট বিটে অবস্থিত। পরিবেশ ও বনমন্ত্রনালয় ২০১১ সালে ১৪ ডিসেম্বর “আলতাদিঘীকে জাতীয় উদ্যান” হিসেবে ঘোষনা করেন। এর মোট আয়তন ২৬৪.১২ হেক্টর। বনভূমির মাঝখানে ৪৩ একর আয়তনে গড়ে উঠেছে এক বিশাল দিঘী। জাতীয় উদ্যানের পাশের ১৭.৩৪ হেক্টর বনভুমিকে ২০১৬ সালের ৯ জুন বাংলাদেশ বন অভিদপ্তর বিশেষ জীববৈচিত্র সংরক্ষণ এলাকা হিসেবে ঘোষনা করেন।
বগুড়া থেকে বেগম রোকেয়া আলতাদীঘি দেখতে আসেন। ‘দীঘির দূষিত পানি ও দুই পাড় থেকে অসংখ্য গাছ কেটে ফেলা দেখে বিস্মিত হয়েছেন তিনি। প্রকৃতির নিসর্গ আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যানে বন বিভাগের উদাসীনতায় পরিবেশ বিপন্ন হয়েছে। ফলে পরিযায়ী পাখিদের সংখ্যা কমে গেছে বলে তিনি জানান।‘
পত্নীতলা থেকে আসা অপর দর্শনার্থী আব্দুর রহমান জানান, ‘এর আগে দিঘীর পরিবেশ অনেক সুন্দর ছিল। দিঘির বুকে পদ্ম ফুলের আড়ালে খেলা করতো পাখিরা। দিঘির বিবর্ণ দূষিত পানি দেখে তিনি খোব প্রকাশ করেন।‘
জয়পুরহাট থেকে অপর দর্শনার্থী ফিরোজা মহল শিল্পী বলেন, ‘ফেসবুকে আলতাদিঘীর দুই পাশে অনেক গাছ ও দিঘীর আকাশে ঝাঁক বেঁধে দাপিয়ে বেড়াতে দেখেছিলেন পরিযায়ী পাখিদের। বন কর্তৃপক্ষের অবহেলায় দিঘির পঁচা পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে পরিযায়ী পাখিরা। এমন চলতে থাকলে আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যান থেকে অতিথি পাখিদের কোলাহল থেমে যাবে।‘
উপজেলা বন বিট কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, ‘উর্ধতন কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমতি পেলে দীঘির খনন কাজ শুরু করা হবে। দীঘির দুই পারের গাছগুলো পুরনো হওয়ায় কেটে ফেলা হয়েছে। সেখানে শোভা বর্ধনকারী গাছ লাগানো হবে। আবহাওয়ার কারণে পরিযায়ী পাখিদের সংখ্যা অনেক সময় আপডাউন করলেও পাখিদের সংখ্যা বেড়েছে।