আব্বাছ আলী/রাশেদ রিপনঃ
জাপানের হিরোশিমায় ৩৯ তম জি-৭ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৯ থেকে ২১ মে ২০২৩। বিশ্বের সাতটি বৃহত্তম উন্নত অর্থনীতির দেশ -কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান ২০২১ সালের শেষ নাগাদ কার্বন নির্গমনকারী কয়লা প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ করতে এবং প্যারিস চুক্তির ভিত্তিতে ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্য পূরণের জন্য সমস্ত জীবাশ্ম জ্বালানির বিনিয়োগ বন্ধ করতে সম্মত হয়েছিলেন। কিন্তু জাপান সরকার ও জাপানের প্রতিষ্ঠান জাইকা উন্নত প্রযুক্তির নামে এ বিনিয়োগ অব্যহত রেখেছে। একই সাথে মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনায় শিল্প উন্নত দেশ গুলো যাতে বিনিয়োগ করে তার জন্য আহবান জানানো হয়। আজ ১৮ জুন২০২৩ রাজশাহী অলকার মোড়ে বৈদেশিক দেনা বিষয়ক কর্মজোট (বিডাব্লুজিইডি), ক্লিন এবং পরিবর্তনের এর উদ্যোগে আয়োজিত এক মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন। এসময় বক্তব্য দেন পরিবর্তন পরিচালক রাশেদ রিপন, সচেতনের সমন্বয়কারি মাহামুদউন নবী পলাশ এবং মহিলা পরিষদ জেলা সাধারণ সম্পাদক অঞ্জনা সরকার। বক্তারা বলেন জাপানসহ পৃথিবীর উন্নতদেশ গুলো জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ করে আমাদের মত দরিদ্র দেশের কাঁধে ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। ফলে বাড়ছে ক্যাপাসিটি চার্জ বিদ্যুৎকেন্দ্র গুলোকে ২০০৭-০৮ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পযন্ত ১,৩২,৬৬৮.২০ কোটি টাকা (১৬ বিলিয়ন ডলার) ক্যাপাসিটি চার্জ (সক্ষমতা পারিতোষিক) দিতে হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের সক্ষমতা পারিতোষিকের পরিমান হবে প্রায় ২৩,০০০ কোটি টাকা (২.১২ বিলিয়ন ডলার)।
ইনস্টিটিউট অফ এনার্জি ইকোনমিক্স, জাপান (আইইইজে) বর্তমানে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) এর সহায়তায় বাংলাদেশের জন্য ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টার প্ল্যান (আইপিএমপি) প্রণয়ন করছে। এখানে আমদানিকৃতকয়লা এবং তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রাধান্য বেশি দেয়া হয়েছে যদিও বাংলাদেশ এখন জ্বালানির গুরুতর ঘাটতির সম্মুখীন। দেশের বর্তমান সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদা ১৫,৬৪৮ মেগাওয়াট (১৯ এপ্রিল, ২০২৩) কিন্তু গ্রিড সংযুক্ত সক্ষমতা ২৪,১৪৩ মেগাওয়াট (১৫ মে,২০২৩) ফলে সারা বছর ৮৪৯৫ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র অলস বসে থাকে যা মোট চাহিদার ৫৪.৩%। সৌর ও বায়ু বিদ্যুতে বিনিয়োগ করলে এ সংকট থেকে কিছুটা মুক্তি পাওয়া যেত।
প্রস্তাবিত আইপিএমপিতে পরিছন্ন জ্বালানির আওতায় উন্নততর প্রযুক্তির নামে আমদানি নির্ভর অনির্ভরযোগ্য তরল হাইড্রোজেন অ্যামোনিয়া ও কার্বন সংরক্ষণ প্রযুক্তি প্রবর্তনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে যা দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া খসড়া পরিকল্পনায় ২০৫০ সাল নাগাদ ৩০.৭% জীবাশ্ম জ্বালানি, প্রধানত কয়লা ও এলএনজি ৩২.৮% তথাকথিত উন্নত প্রযুক্তি এবং মাত্র ১৭.১% শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের প্রস্তাব করা হয়েছে যাস্থানীয় পরিবেশ ও জনসাধারণের জীবন জীবিকার উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প উন্নয়নে বাংলাদেশের অনেক সম্ভাবনা আছে। এর জন্য প্রয়োজন যথাযথ পরিকল্পনা এবং বিনিয়োগ। বাংলাদেশের ‘টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন’ কর্তৃপক্ষ প্রণীত সৌরশক্তি পরিকল্পনার খসড়া অনুসারে ২০৪১ সাল নাগাদ ২৫,০০০ থেকে ৪০ হাজার মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করার জন্য পর্যাপ্ত জায়গায় রয়েছে মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০% এবং ২০৪১ সালের মধ্যে কমপক্ষে ৫০% এবং ২০৫০ সালের মধ্যে শতভাগ নবায়নযোগ্য শক্তিতে পৌঁছাতে চাই।