নওগাঁ নিউজ ডেস্কঃ
নওগাঁয় মোশাররফ হোসেন নামে ৮১ বছর বয়সী এক বৃদ্ধকে তাঁর সম্পত্তিতে প্রবেশে বাঁধা দেওয়াসহ সম্পদের ক্ষতিসাধন করার অভিযোগ উঠেছে তাঁর ভাতিজাদের বিরুদ্ধে। গত ২৬ আগস্ট দুপুরে জেলার সদর উপজেলার হালঘোষপাড়া গ্রামে ওই বৃদ্ধের জমির বাঁশের বেড়া ও তাঁরকাটা ভেঙে ফেলেন তাঁরা। পরে এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী। ঘটনাটির সুষ্ঠ সমাধানে সংশ্লিষ্টদের সহায়তা কামনা করেছেন তিনি।
এজাহার ও ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, মোশাররফ হোসেনের ভিটেবাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের পাঁচবাড়িয়া গ্রামে। কর্মজীবনে ছিলেন শিক্ষক। ছেলে রাব্বী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে চাকুরীর সুবাদে মোশররফ হোসেনকে বর্তমানে শহরের চক এনায়েত দয়ালের মোড় মহল্লায় নিজের বাড়িতে এনে রেখেছেন। এর সুযোগ নিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্বজনরা। শহরে চলে আসার পর থেকেই বক্তারপুর ইউনিয়নের হালঘোষপাড়া গ্রামে তার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া সম্পত্তিগুলোর উপর নজর ভাতিজাদের। নিজের চাচাকে জমিজমা থেকে বঞ্চিত করতে দুই ভাতিজা জোটবদ্ধ হয়ে লেগে পড়েন। দীর্ঘ বছর যাবত মোশাররফ হোসেনের ভোগদখলে থাকা সম্পত্তিতে সম্প্রতি তাঁকে প্রবেশেও বাঁধা দেওয়া হয়। জমিগুলো ঘেরাও করে রাখা বাঁশের বেড়া ও তাঁরকাটা উপড়ে ফেলে জবরদখলের হুশিয়ারী দেন মোশাররফের ভাতিজা মোরশেদ আলম ও মনোয়ার কায়সারসহ ভাতিজি জামাই হাবিবুর রহমান। দেশীয় অস্ত্রের মহড়া করে আতঙ্ক ছড়ানো হয় পুরো গ্রামে। এতে শৈষ বয়সে নিজের জমিজমা নিয়ে চরম দুঃশ্চিন্তায় অসহায় হয়ে পড়েছেন শিক্ষক মোশাররফ হোসেন।
মোশাররফ হোসেন বলেন, শহরে থাকায় গ্রামের জমিগুলো থেকে আমাকে বঞ্চিত করার জন্য কয়েক বছর আগে থেকেই চক্রান্ত করে যাচ্ছে ভাতিজারা। ভেবেছিলাম তাঁরা একদিন বুঝবে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি আরো জটিল দিকে নিয়ে গেছে তাঁরা। আমার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমি থেকে আমাকেই উচ্ছেদের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। নিজের জমিতে ঢুকতে গেলে হত্যার হুমকি দিচ্ছে তাঁরা। এজন্য নিজের জমি রক্ষা ও নিরাপত্তা চেয়ে বাধ্য হয়ে থানায় এজাহার দিয়েছি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মোরশেদ আলম বলেন, আমার বাবা বেঁচে থাকা অবস্থায় চাচা বেশ কিছু জমিজমা তাঁর কাছে বিক্রি করেছিলেন। এখন সেই বিক্রি করা জমির মালিকানা দাবী করছেন চাচা। এটা নিয়ে বিরোধের জেরে তিনি আমাদের জমির ধান বিনষ্ট করেছেন। বিষয়টি নিয়ে থানায় অভিযোগ করায় পাল্টা তিনিও অভিযোগ করেছেন। চাচার সম্পত্তি থেকে তাঁকে কখনোই উচ্ছেদের চেষ্টা চালানো হয়নি। সমস্যা সমাধানে দফায় দফায় বৈঠকের চেষ্টা চালিয়েও সমাধান হয়নি।
মনোয়ার কায়সার বলেন, আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তিতে অবৈধভাবে বেড়া ও তাঁরকাটা দিয়ে রেখেছিলো চাচা। এজন্য সেগুলো উপড়ে ফেলা হয়েছে। জমি নিয়ে বিরোধ মেটাতে চাচার সঙ্গে কয়েক দফা বসার চেষ্টা চালিয়েও সম্ভব হয়নি।
আরেক অভিযুক্ত হাবিবুর রহমান বলেন,শশুরের মৃত্যুর পর তাঁর জমিগুলোর একটি অংশ আমার স্ত্রীও পাবে। স্ত্রীর জমি বের করার জন্য চাচা শশুর মোশাররফের সাথে ককে দফা বৈঠকের পরেও সমাধান হচ্ছে না। এখন তিনি জমি না দিয়ে উল্টো হয়রানি করার চেষ্টা করছেন। তাঁকে কখনোই অসম্মান করা হয়নি।
নওগাঁ সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়সাল বিন আহসান বলেন, চাচা এবং ভাতিজা উভয় পক্ষ জমি সংক্রান্ত জটিলতায় পাল্টাপাল্টি থানায় অভিযোগ করেছেন। জমি সংক্রান্ত বিষয়ে সরাসরি থানার হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। তাই তাঁদের আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।