ধামইরহাট প্রতিনিধিঃ
নওগাঁর অবহেলিত বরেন্দ্র জনপথ হিসেবে পরিচিত নওগাঁ-২ (ধামইরহাট ও পত্নীতলা) আসনে আসন্ন ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন কে কেন্দ্র করে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী ৪৭ নওগাঁ-২ আসনের সাবেক এমপি শহীদুজ্জামান সরকার বাবলুর সঙ্গে ভোটের মাঠে ও ময়দানে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আখতারুল আলমের। আওয়ামী লীগ সমর্থিত স্বতন্ত্র এই প্রার্থী (ট্রাক প্রতীক) নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় পাল্টে যাচ্ছে ভোটের হিসাব-নিকাশ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কে জয়ী হবেন তা নিয়ে সকাল-সন্ধ্যা পাড়ায় মহল্লায় এবং চায়ের টেবিলে প্রার্থীদের পক্ষে ও বিপক্ষে চলছে নানান আলোচনা ও সমালোচনা।
অপর দিকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মেহেদী মাহমুদ রেজা ৩০ জানুয়ারি দুপুরে উচ্চ আদালতের রায়ের মাধ্যমে প্রার্থীতা ফিরে পেয়ে ৩১ জানুয়ারি দুপুরে ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে ভোট যুদ্ধে নেমেছেন। এর ফলে এ আসন থেকে মোট চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তবে সুষ্ঠু ভোট হলে নৌকাকে ডুবিয়ে শেষ হাসিটা হাসবেন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আখতারুল আলম এমনটাই মনে করছেন দুই উপজেলার ভোটাররা। তারা বলছেন, ১৫ বছর ধরে ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে শহীদুজ্জামান সরকারের পছন্দের খলিফাদের ক্ষমতার অপব্যবহার, টেন্ডারবাজি ও দলবাজি থেকে পরিত্রান পেতে নতুন ও যোগ্য নেতৃত্বকেই এমপি হিসেবে নির্বাচিত করবেন তারা। অন্যদিকে ভোটের মাঠে খুব একটা সুবিধা করতে না পারলেও জাতীয় পার্টি মনোনীত (লাঙ্গল প্রতীক) প্রার্থী অ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন বিপুল ভোটে জয়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
স্থানীয় ও বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, শহীদুজ্জামান সরকার ১৯৯১ সালে বিএনপির প্রার্থী আব্দুল মান্নান কে হারিয়ে প্রথম সংসদ সদস্য নিদর্বাচিত হন। এরপর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপির) ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে শামসুজ্জোহা খান জোহা ১৯৯৬-২০০১ সালে নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮-২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৫ বছর ধরে শহীদুজ্জামান সরকার বাবলু দলের দুর্দিনের কান্ডারী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের দলের বিভিন্ন জায়গা থেকে বাদ দিয়ে জামায়াত ও বিএনপি থেকে আসা সুবিধাবাদীদের চাকরি দেওয়া থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ পদে পুনর্বাসনের মধ্য দিয়ে ত্যাগী নেতাদের কৌশলে কোণঠাসা করে রাখার মতো একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই উপজেলায় চায়ের দোকান থেকে শুরু করে গ্রামের হাট বাজার ও বিভিন্ন মোড়ে পাড়ায় মহল্লায় প্রার্থীদের ব্যানার আর পোস্টারে ছেয়ে গেছে। সড়কে ব্যাটারি চালিত ভ্যান দাপিয়ে বেড়াচ্ছে প্রচার প্রচারণায়। শীতকে উপেক্ষা করে কর্মী সমর্থকদের নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট প্রার্থনা করছেন প্রার্থীরা। প্রার্থী আর কর্মীদের কুশল বিনিময়ে যেনো উৎসব মুখর হয়ে উঠেছে নির্বাচনের আমেজ।
বুধবার (৩১ জানুয়ারি) ভোটের মাঠে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে জানা গেছে, আসন্ন ১২ ফেব্রুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে (ধামইরহাট ও পত্নীতলা) এ আসনের উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের সাবেক ও বর্তমান পদ বঞ্চিত নেতা-কর্মী এবং বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা স্থানীয় সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হয়ে ইঞ্জিনিয়ার আখতারুলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আইয়ুব হোসেন নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার ঘোষণা করে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারুলের পক্ষ নিয়েছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন ও ভোটের মাঠে সাধারণ ভোটারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা গেলে, এ আসনে নতুন মুখ আসার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না এমনটাই দাবি করেন আওয়ামী লীগের একাধিক বঞ্চিত সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মী, ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যানগণ ও সাধারণ ভোটাররা।
একারণে ১২ ফেব্রুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাঠে ও ময়দানে হিসাব নিকাশ পাল্টে গেছে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত (নৌকার প্রতিক নিয়ে) শহীদুজ্জামান সরকার, আওয়ামী লীগ সমর্থিত (ট্রাক প্রতীক) স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আখতারুল আলমের মধ্যে ভোটের মাঠে ও ময়দানে ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ দৌড়ে খুব একটা পিছিয়ে নেই জাতীয় পার্টির মনোনীত (লাঙ্গল প্রতীক) প্রার্থী এডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন।
উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি আব্দুল হাই দুলাল বলেন, ‘এর আগে উপজেলায় চার খলিফা ছিল। এখন তা বেরে হয়েছে অর্ধশতাধিক। ক্ষমতার অপব্যবহার করে বালু মহল থেকে শুরু করে সব জায়গায় টেন্ডারবাজিসহ নিজেদের ইচ্ছেমতো অপকর্ম করে যাচ্ছেন। এদের পরিবর্তন না হলে আওয়ামী লীগসহ এর অঙ্গ সংগঠনের অস্তিত্ব সংকট দেখা দেবে।’
পত্নীতলা উপজেলার পাটিচোড়া ইউনিয়ন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের জেলা মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার ছাদেক উদ্দীন আহম্মেদ বলেন, ‘বর্তমান সংসদ সদস্য দুই উপজেলায় তাঁর পছন্দের খলিফারদের নিয়ে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। তাছাড়া যে নেতার কাছে সাধারণ মানুষ ও ত্যাগী নেতাকর্মীরা যেতে পারেন না তাদের পরিবর্তন দরকার। এ কারণেই একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে তিনি আওয়ামী লীগ সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারুলের পক্ষ নিয়েছেন।’
খেলনা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড চকমগলিশ এলাকার গ্রামপ্রধান শৈলেন হাঁসদা বলেন, ‘বরাবরই জোটবদ্ধ হয়ে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করেছেন। অথচ ভোট শেষে এলাকায় আসাতো দুরের কথা বিপদ আপদে দাবিদাওয়া নিয়ে গেলে ওই নেতা আমাদের আশার বানী শোনাতেই ব্যাস্ত থাকেন। একারণে ট্রাক মার্কায় ভোট দেবেন বলে জানান।’
লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘নওগাঁর অবহেলিত জনপদের (ধামইরহাট ও পত্নীতলা) সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন ও উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তিনি জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যোগ্য প্রার্থী হিসেবে এ এলাকার সাধারণ ভোটাররা তাকেই ভোট দিয়ে এমপি নির্বাচিত করবেন বলে জানান।