মিলন চন্দ্র দেবনাথ,নওগাঁঃ
নওগাঁর সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘একুশে পরিষদ নওগাঁ’র আয়োজনে সুন্দরবনের অজানা কাহিনী নিয়ে কথা বলেন, জলদস্যু জয়ী সাংবাদিক মোহসীন উল হাকিম। গত ১লা জুলাই নওগাঁ’র শত বছরের ঐতিহ্যবাহী প্যারিমোহন সাধারণ গ্রন্থাগারের দ্বিতীয় তলার হলরুমে একুশে পরিষদ নওগাঁ’র সদস্যদের নিয়ে সুন্দরবনের অজানা কথা নিয়ে তিনি আলোচনা করেন নওগাঁ’র কৃতি সন্তান জলদস্যু জয়ী সাংবাদিক মোহসিন উল হাকিম। আলোচনায় উঠে আসে, কিভাবে তিনি জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করলেন। কিভাবে তিনি সরকারের উচ্চ মহলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তাদেরকে অস্ত্র সহ আত্মসমর্পণে রাজি করালেন। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার যখন ক্ষমতায় আসে অর্থাৎ ২০০৯ সালে, তারপর ২০১১ সালে,তারপর ২০১৩ সালে সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাটির সমাধান করতে তিনি ব্যর্থ হয়ে যান। এরপরেও তিনি নিরাশ হননি। কারণ তিনি জলদস্যুতের কথা দিয়েছিলেন, তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করবেন! তারা যদি অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে, তাহলে অন্ততপক্ষে তাদের মরতে হবে না। এসব বিষয়ে সাংবাদিক মোহসীন উল হাকিম সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্ণধারদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার বৈঠকে মিলিত হন! স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও তিনি বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেন। কারণ তার ইচ্ছে ছিল, সুন্দরবন জলদস্যু মুক্ত করা, তৎ সঙ্গে রাবের সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধের মাধ্যমে তাদের যে প্রাণনাশের হুমকি রয়েছে সেখান থেকে জলদস্যুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা। প্রশ্নোত্তর পর্বে একুশে পরিষদ নওগাঁ’র সভাপতি অ্যাডভোকেট ডিএম আব্দুল বারী, উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম খান, উপদেষ্টা বিন আলী পিন্টু, উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট মুকুল চন্দ্র কবিরাজ, সহ-সভাপতি এম এম রাসেল, সদস্য মিলন চন্দ্র সহ প্রমুখ আলোচনা অংশগ্রহণ করেন। একুশে পরিষদ নওগাঁ’র সদস্য মিলন চন্দ্রের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পারিবারিকভাবে তিনি জলদস্যুদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছেন এবং জলদস্যুদের বলেছেন হয় অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করতে হবে, নয়তো র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের মাধ্যমে তাদের মরতে হবে। পারিবারিকভাবে সম্পর্ক স্থাপনের কারণেই জলদস্যুদের অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করাতে তিনি সফল হয়েছেন। জলদস্যুরা তাকে অনেক বিশ্বাস করতেন। একুশে পরিষদ নওগাঁর সভাপতি এ্যাডভোকেট ডিএম আব্দুল বারির এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথমত ২৪ জন জলদস্যুকে আত্মসমর্পণ করাতে তিনি সফল হন। ২৪ জন আত্ম সমর্পণ করা জলদস্যুরা স্বাভাবিক জীবনের ফিরিয়ে আসার পর তাদেরকে সরকারিভাবে পুনর্বাসন করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তাদের স্বাভাবিক জীবন দেখে অন্যান্য জলদস্যুরা নিজেদের জীবন রক্ষার্থে এবং পরিবারের ভবিষ্যৎ জীবনের কথা চিন্তা করে তারাও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করেন। এর পরবর্তীতে একসঙ্গে ৩৫০ জন জলদস্যু অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আছে। এমন একটি মহৎ কাজের কারণে জলদস্যুরা সবাই মিলে তাকে ২৫ লক্ষ টাকা উপহারও দেন। বাংলাদেশের সুন্দরবনে জলদস্যু মুক্ত করার কারণে দেশ ও বিদেশে তিনি অনেক সুনাম কুরিয়েছেন। সরকারের কাছ থেকে তিনি সংবর্ধনা পেয়েছেন ও সুনাম কুরিয়েছেন। নওগাঁ’র কৃতি সন্তান কীর্তিমান সাংবাদিক মোহসিন উল হাকিম বর্তমানে যমুনা টেলিভিশনের ঢাকা অফিসের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। তার নিজ বাসা নওগাঁ শহরের পার নওগাঁর হাজীপাড়ায়। সুন্দরবনের নানা অজানা কথা প্রায় তিন ঘন্টা আলোচনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানটির আনুষ্ঠানিকতার সমাপ্তি ঘটে।