নওগাঁ নিউজ ডেস্কঃ
‘পরীক্ষায় ভালো ফলাফল মেধা যাচাইয়ের একমাত্র মাপকাঠি নয়। যারা যুগে যুগে পৃথিবীকে আলোকিত করেছেন, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তাদের সাফল্যের পেছনে একমাত্র ভূমিকা পালন করেনি। তাই পরীক্ষায় ভালো ফলের পাশাপাশি ভালো মানুষ হতে হবে। মানবিক মূল্যবোধ ও দেশপ্রেমের মতো গুণাবলিতে সমৃদ্ধ হতে হবে। আলোকিত হও, আলো ছড়াও।’
গতকাল শুক্রবার সকালে নওগাঁয় সংবর্ধনা নিতে আসা জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে অতিথিরা এসব কথা বলেন। শিক্ষার ডিজিটাল প্লাটফর্ম শিখোর পৃষ্ঠপোষকতায় নওগাঁ সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে প্রথম আলো।
সকাল আটটার পর থেকেই শিক্ষার্থীরা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানস্থলে জমায়েত হতে শুরু করে। নওগাঁর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া ৯০০ এর অধিক শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসেছিল। প্রচ- রোদ আর গরমকে উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা নওগাঁ সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরের নির্ধারিত বুথ থেকে ক্রেস্ট, স্ন্যাকসসহ উপহারসামগ্রী গ্রহণ করে নিবন্ধন করা শিক্ষার্থীরা। এরপর দলে দলে ভাগ হয়ে আড্ডা ও সেলফি তোলায় মেতে ওঠে শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁদের মধ্যে উচ্ছ্বাস বিরাজ করে
সকাল ৯টার মধ্যে সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তন শিক্ষার্থীতে কানানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আসা অভিভাবকদের আগমনে মিলনায়তনের আশপাশের চত্বরও ভরে যায়। এরপর সকাল সাড়ে ৯টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন নওগাঁ সারেগামা সংগীত ভুবনের শিল্পী ও নওগাঁ বন্ধুসভার সদস্যরা। নওগাঁ বন্ধুসভার বন্ধু পারমিতা রায় ও বিষ্ণু কুমার দেবনাথের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর নওগাঁ প্রতিনিধি ওমর ফারুক।
অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. তারিকুল হাসান বলেন, ‘তোমরা এই দেশের আগামীর কর্ণধার। আজকের এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শুধু একটি ক্রেস্ট আর সার্টিফিকেট তুলে দেওয়ার জন্য ডাকা হয়নি। তোমাদের এখানে ডাকা হয়েছে কিছু দ্বায়িত্ব বুঝে দেওয়ার জন্য। তোমাদেরকে আরও দ্বায়িত্বশীল হতে হবে, আরও দ্বায়িত্ববোধসম্পন্ন মানুষ হতে হবে। কেন? আমার লাভ কী? প্রথম আলোর লাভ কী? প্রথম আলোর সঙ্গে যাঁরা আছেন তাঁদের লাভ কী? তাঁরা হচ্ছে সেই ধরণের মানুষ যাঁরা নতুন দ্বায়িত্বশীল ব্যক্তি তৈরি করতে চায়। শুধু ভালো ফল অর্জন করলেই হবে না। তোমাদের ভালো মানুষ হতে হবে। মানবিক মূল্যবোধ, দ্বায়িত্বশীল মানুষ হতে হবে।’
কৃতী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে নওগাঁ সরকারি কলেজের সাবেক শরিফুল ইসলাম খান বলেন, ‘আলোকিত হও, আলো ছড়াও। যে আলো নিজের ভেতরে লুকিয়ে আছে সে আলোকে ছড়িয়ে দাও। প্রকাশ করো, প্রকাশিত হও। স্বাবলম্বী হও, নিজের পায়ে দাঁড়াও। তোমাদের আলোয় আলোকিত হোক দেশ, বিদেশ এবং আগামীকাল। আমরা যাঁরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশটাকে স্বাধীন করেছি। আজকে তোমরা শপথ নাও তোমরা এই দেশের স্বাধীনতাকে ভুলণ্ঠিত হতে দেবে না। তোমাদেরকে মানবিক মূল্যবোধ ও দেশপ্রেমের গুণাবলিতে সমৃদ্ধ হতে হবে।’
নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম রবিন শীষ বলেন, ‘মানুষের সবচেয়ে বড় গুণ হলো মানবিকতা। এখন যাঁরা আছে, এর বেশিরভাগই হয়তো ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা সরকারি চাকরিজীবী হতে পারবে। কিন্তু শতভাগ মানুষ হওয়া সম্ভব। জীবনের একটা পরীক্ষায় ভালো করেই কখনোই নিজের মধ্যে অহমিকা আনা যাবে না। জীবনে আরও পরীক্ষা বাকি আছে, সেগুলোতেও সফল হতে হবে। এজন্য ধৈর্য ধরতে হবে, লেগে থাকতে হবে।’
প্রথম আলোর রাজশাহী নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহাম্মদ আজাদ বলেন, ‘ভালো ফলের জন্য তোমাদের শিক্ষকদের অবদান রয়েছে, মা–বা-বা তো আছেনই। আজকে যেসব গুণীজনেরা দিকনির্দেশনামুলক বক্তব্য দিলেন সেগুলোকে মনের মধ্যে লালন করতে ভবিষ্যতেও জীবনের প্রতিটি ধাপে তোমরা সফল হতে পারবে। পরীক্ষার ফলাফল মেধা যাচাইয়ের একমাত্র মাপকাঠি নয়। যারা যুগে যুগে পৃথিবীকে আলোকিত করেছেন, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তাদের সাফল্যের পেছনে একমাত্র ভূমিকা পালন করেনি।’
অনুষ্ঠানে অন্যান্য আয়োজনের মধ্যে ছিল কৃতী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে গান ও কবিতা আবৃত্তি। ছিল স্থানীয় সারেগামা সংগীত ভুবন, নৃত্য সংগঠন ত্রিতাল একাডেমি ও নওগাঁ বন্ধুসভার সদস্যদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।