নওগাঁ নিউজ ডেস্কঃ
প্রকৃতিতে বইছে শীতের আগমনী বার্তা। আর এই শীতের আগমনে খেজুর গাছ থেকে সুমিষ্ট ও মূল্যবান রস আহরণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে নওগাঁর গাছিরা। খেজুর গাছকে বলা হয় মধুবৃক্ষ। আর সারা বছর ফেলে রাখা এই মধুবৃক্ষের যত্ন বেড়ে যায় শীতকাল আসলেই। বছরের এই সময়টাতে শুরু হয় গাছিদের মহাব্যস্ততা। আর পুরো শীতকাল জুড়েই তাদের এই ব্যস্ততা লক্ষ্য করা যায়। শীতকালে জেলার প্রায় প্রতিটি ঘরেই চলে খেজুর রস দিয়ে হরেক রকম পিঠা তৈরির উৎসব। তাইতো শীত শুরু হতে না হতেই অত্যন্ত যত্নের সাথে রস সংগ্রহ করতে যেনো বিন্দু মাত্র দেরি নেই গাছিদের। শীত যত বাড়বে রসের মিষ্টি এবং স্বাদ ও তত বাড়বে। বছরের শুরুতেই রসের চাহিদা বেশি থাকায় দামও পাওয়া যায় ভালো। এসময় খেজুর রসের তৈরি পাটালি গুড় ২১০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। বর্তমান জেলায় খেজুর গাছের পরিমাণ কমে যাওয়ায় আগের তুলনায় এখন পর্যাপ্ত রস সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়বে বলেও জানান জেলার বাসিন্দারা।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গিয়েছে, শীতের তীব্রতা দেখা না দিলেও এরই মধ্য অনেক গাছি খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের কাজ শুরু করে দিয়েছে। গ্রামের আকা বাকা রাস্তার দুই পাশের, ডোবা ও পুকের পাড়ে সারি সারি অপরিচ্ছন্ন খেজুর গাছের ডাল কেটে পরিষ্কার করার কাজ অনেক আগেই শেষ করে এরই মধ্য অনেকেই শুরু করেছে রস সংগ্রহের কাজ। সন্ধায় খেজুর গাছে লাগানো হয় মাটির কলস। সারা রাত ওই কলসে রস জমে। ভোরের আলো বের হওয়ার সাথে সাথে গাছিরা রস ভর্তি মাটির কলসটি নামিয়ে এনে এক জায়গায় জড়ো করে। এর পর সেই রস গুলো ছেকে টিনের কড়াই এ জাল দিয়ে তৈরি করা হয় পাটালি ও লালি গুড়। শীতকালে জেলার গ্রামঞ্চলে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কাচা রস জ্বাল করে পাটালি ও লালি গুড় তৈরির এমন দৃশ্য চোখে পড়বে।
নওগাঁ সদর উপজেলার কোমাইগাড়ি এলাকায় গাছি আজিজ জানান, আমি এই এলাকায় প্রায় ২৫০ টি গাছ লাগিয়েছি। বিভিন্ন গাছ থেকে কম বেশি ৩ থেকে ৫ কেজি করে রস পাওয়া যায়। আমরা খেজুরের রস ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রয় করছি আর গুড় বিক্রয় করছি ২১০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি । প্রায় ৪ কেজি রস জ্বাল দিয়ে আমরা ১ কেজি গুড় তৈরি করে থাকি। আমাদের বাসা নাটোর জেলায় আমরা প্রতিবছর এই এলাকায় শীত মৌসুমে আসি খেজুর রস ও গুড়ের ব্যবসার উদ্দেশ্যে। আমার ভাই রাজদুল উপজেলার রেন্টিতলা এলাকায় প্রায় ৩০০ টি খেজুর গাছ লাগিয়ে খেজুর রস সংগ্রহ করছে। তবে শীতের সঙ্গে রস ঝরার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। শীত যত বেশি পড়বে তত বেশি রস ঝরবে। রসের স্বাদও ততই সুমিষ্ট হবে। আশা করছি এবছর রস বিক্রি করে ভালো লাভবান হবো।
রানীনগর উপজেলার আমজাদ নামের আরেক গাছি জানান, শীতের এই মৌসুমে রস আর গুড় বিক্রি করে সংসার চালায়। আমি প্রতিদিন সকালে কাঁচা রস জ্বাল করে লালি তৈরি করি বছর শুরুর এই সময় চাহিদা অনেক সে অনুযায়ী আমদানি কম। তাই আমি বাজারে নিয়ে যাওয়ার আগেই আমার বাড়ি থেকে মানুষ রস কিনে নিয়ে যায়। কিন্তু দিন দিন গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে তাই ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ি রস ও গুড় প্রস্তুত করতে পারছি না তাই আগের থেকে তুলনামূলক দামও অনেক বেশি হয়েছে। খেজুর গাছ এবং খেজুর রস গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। তাই এই ঐতিহ্য কে ধরে রাখতে আমাদের খেজুর গাছ রোপণের দিকে নজর দিতে হবে। আগামী প্রজন্মের যেন এই ঐতিহ্যবাহি খাবারের পরিপূর্ণ স্বাদ গ্রহণ করতে পারে।