1. admin@dailynaogaonnews.com : admin :
রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
নওগাঁয় নেসকোর প্রিপেইড কার্ড মিটারে ভোগান্তী; চালু না করার দাবীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক আরবী ভাষা দিবসে আমাদের প্রত্যাশা ধামইরহাটে দুস্থ ও এতিম দের মাঝে দুম্বার মাংস বিতরণ করলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান সাপাহারে বিএনপি নেতা মাহমুদুস সালেহীনের ব্যক্তিগত উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ আঠারো ডিসেম্বর নওগাঁয় হানাদার মুক্ত দিবস পালিত থ্রি স্টার ক্লাবের আয়োজনে নওগাঁর চকচাঁপাই কলেজ মাঠে ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত ধামইরহাটে উদ্যোক্তা তৈরিতে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে সামাজিক সংগঠন “মানবসেবা “ একুশে পরিষদ নওগাঁ’র আয়োজনে বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী পালিত নওগাঁর ধামইরহাটে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ বায়োজিদসহ সকল শহীদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা নওগাঁয় রোভার স্কাউটের তাঁবুবাস ক্যাম্পের উদ্বোধন

মুক্তিযুদ্ধে নওগাঁ জেলার ইতিহাস

  • প্রকাশিত : শুক্রবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৩
  • ৬৮৭ বার পঠিত

মোঃ রুহেল আহম্মেদ,ধামইরহাট:
প্রাচীনকাল থেকেই বরেন্দ্র জনপদের অন্তর্ভুক্ত বর্তমান নওগাঁ জেলা প্রত্নতত্ত্ব ইতিহাসে সমৃদ্ধ। তেমনি নওগাঁ জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং গৌরবদীপ্ত।

মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির জীবনে সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা অর্জন করেন ১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ। ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকায় আত্মসমর্পণ করলেও নওগাঁয় পাকসেনারা অত্মসমর্পণ করবেন না বলে ঘোষণা দেন। এতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।

তৎকালীন বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জালাল হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে ১৭ই ডিসেম্বর সকাল ৭টার দিকে প্রায় ৩৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা নওগাঁ শহর ঘিরে ফেলেন। মুক্তিযোদ্ধারা ঐই দিন শহরতলীর জগৎসিংহপুর ও খলিশাকুড়ি গ্রামে অবস্থান নিয়ে পাক বাহিনীর উপর আক্রমণ চালান। এ সময় পাক হানাদাররা বাহিনী ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে। রাত ৮টা পর্যন্ত উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। এতে ৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাঙালিজাতি বিজয় লাভ করলেও নওগাঁ জেলা হানাদার মুক্ত হয় ১৮ই ডিসেম্বর। তারই ধারাবাহিকতায় নওগাঁ জেলায় পালিত হয় ১৮ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত দিবস।

এ বিষয়ে বরেন্দ্রভূমির ইতিহাস ঐতিহ্য বিষয়ক গবেষক ও লেখক প্রভাষক মো. আব্দুর রাজজাক (রাজু) স্যার বলেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে নওগাঁ জেলার প্রতিটি থানায় প্রতিটি গ্রামে প্রতিটি মহল্লায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নেতৃত্বে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৰ্বদলীয় ভাবে ছাত্র সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়।

সৰ্ব্বত্রই অসহযোগ আন্দোলনের ফলে নওগাঁ অঞ্চলের বেসামরিক প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে দৈনন্দিন কাজকর্ম পরিচালিত হতে থাকে।

পাক সরকারের বিরুদ্ধে এই গণবিদ্রোহে নওগাঁ অঞ্চলে যারা নেতৃত্ব দেন তারা হলেন (১) এম এ রাকিব, (২) খালেদ তাহের মকু, (৩) মোজাহারুল হক পোনা, ( 8 ) মো. আব্দুল জলিল, (৫) গিয়াস উদ্দিন সরদার, (৬) কসিম উদ্দিন আহমেদ, (৭) দেওয়ান আজিজুর রহমান, (৮) মো. বয়তুল্লাহ, (৯) ডাক্তার বশিরুল হক, (১০) কাজীমদার ওয়াসিম উদ্দিন, (১১) ক্যাপ্টেন ইসমাইল হোসেন, (১২) এমাজ উদ্দিন পরামানিক, (১৩) আজিজুল ইসলাম খান (এসবি), (১৪) শাহ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, (১৫) সরদার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, (১৬) আতাউর রহমান তালুকদার, (১৭) এ কে এম মোরশেদ, (১৮) এডভোকেট বদরুজ্জামান, (১৯) আবু রেজা বিসু, (২০) আখতারুজ্জামান রঞ্জু, (২১) গোলাম ছামদানী, এছাড়াও শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন (২২) মেজর নজমুল, (২৩) ক্যাপ্টেন গিয়াস, (২৪) নওগাঁ থানার ওসি মো. আফজান, (২৫) ছেলিম খান ও ৭নং ই,পি,আর সদস্যবৃন্দ সহ নাম না জানা অনেকেই সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ পাক সরকারের জুলুম অত্যাচার নির্যাতন ও শৃংখলা থেকে মুক্তি লাভের জন্য দৃঢ় মানসিকতা ও ইস্পাত কঠিন মনোবল নিয়ে গণবিদ্রোহের আগুন জ্বেলে দেয়।

মানুষ ভেদাভেদ ভুলে যায়। বাংলার মানুষ মরিয়া হয়ে এই গণবিদ্রোহে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এক হতে থাকে।

৩ মার্চ ছাত্রলীগ ঢাকা পল্টন ময়দানের এক জনসভার আয়োজন করে। এই জনসভায় বঙ্গবন্ধু তাৎক্ষণিকভাবে স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন অফিস আদালত কল-কারখানার খাজনা-ট্যাক্স বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। এই নির্দেশনা ছড়িয়ে পড়ে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে।

নওগাঁ জেলার প্রতিটি থানায় মুক্তিযোদ্ধারা একত্রিত হতে থাকে। অবশ্য নওগাঁ জেলা সৰ্ব্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম কমিটি পূর্বে থেকেই সংঘটিত ছিল।

১৯৬৯ সালের জানুয়ারি মাসে নওগাঁতে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় বর্তমান নওগাঁ জেলা পরিষদ পার্কে।

ছাত্র নেতা কর্মীদের মধ্যে ( ১) মইনুল ইসলাম ময়না, ( ২ ) জালাল হোসেন চৌধুরী, (৩) আলমগীর নবাব সিদ্দিকী, ( ৪ ) শহীদ হাসান সিকা, (৫) আক্তার আহমেদ সিদ্দিকী, (৬) সফিকুল ইসলাম, (৭) শেখ নুরুল ইসলাম কালু, (৮) আব্দুল মালেক, (৯) মোতাহার মোল্লা, ( ১০) খুররম এর মতো ছাত্রগণ উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া নেতাদের মধ্যে (১) এম. এ. রাকিব, (২) মো. বায়তুল্লাহ, (৩)খালেদ তাহের মকু, (৪) মজাহারুল হক (সানা), ( ৫ ) আজিজুল হক দুলাল, (৬) এ কে এম মোরশেদ, (৭) গোলাম রাব্বানী, (৮) এ্যাড জারজিস, (৯) বদরুজ্জামান খানসহ আরও অনেকে সমবেত
হয়ে সৰ্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন।

নওগাঁর মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রামে আত্মভাগী দেশ মাতৃকার টানে বলিয়ান ছাত্র যুবক ও রাজনৈতিক নেতা কর্মীগণ নবউদ্দ্যমে এই গণআন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েন। এবং একাত্তরে নওগাঁর রণাঙ্গনে এই সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও সাধারণ মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

১৯৭১ সালে ১৮ ডিসেম্বর শনিবার সকাল বেলা ভারতীয় মেজর চন্দ্র শেখরের নেতৃত্বে মিত্র বাহিনী ও জালাল হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী সহ নওগাঁয় প্রবেশ করেন। পাক বাহিনী এই প্রতিরোধে সন্মুখে নিরুপায় হয়ে যায়, ফলে প্রায় দুই হাজার পাকসেনা নওগাঁ কেডি স্কুল থেকে পিএম গার্স স্কুল হয়ে এসডিও অফিস পর্যন্ত রাস্তার দুপাশে অবনত মস্তকে আত্মসমর্পণ করে। ১৯৭১ সালে ১৮ই ডিসেম্বর নওগাঁ স্বাধীনতা লাভ করে।

এইজন্য নওগাঁ জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে সর্ব্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে যুগ থেকে যুগান্তরে।

এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা

© All rights reserved © 2022 Daily Naogaonnews
Theme Customized By Shakil IT Park