1. admin@dailynaogaonnews.com : admin :
রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
নওগাঁয় নেসকোর প্রিপেইড কার্ড মিটারে ভোগান্তী; চালু না করার দাবীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক আরবী ভাষা দিবসে আমাদের প্রত্যাশা ধামইরহাটে দুস্থ ও এতিম দের মাঝে দুম্বার মাংস বিতরণ করলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান সাপাহারে বিএনপি নেতা মাহমুদুস সালেহীনের ব্যক্তিগত উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ আঠারো ডিসেম্বর নওগাঁয় হানাদার মুক্ত দিবস পালিত থ্রি স্টার ক্লাবের আয়োজনে নওগাঁর চকচাঁপাই কলেজ মাঠে ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত ধামইরহাটে উদ্যোক্তা তৈরিতে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে সামাজিক সংগঠন “মানবসেবা “ একুশে পরিষদ নওগাঁ’র আয়োজনে বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী পালিত নওগাঁর ধামইরহাটে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ বায়োজিদসহ সকল শহীদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা নওগাঁয় রোভার স্কাউটের তাঁবুবাস ক্যাম্পের উদ্বোধন

নওগাঁর পত্নীতলায় ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ মেলা

  • প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২২
  • ২৬৮ বার পঠিত

মাসুদ রানা,পত্নীতলা প্রতিনিধিঃ নওগাঁর পত্নীতলায় যতনী পতনী দেড়শ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ মেলা অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশের মানুষ আর তার শৈশবের স্মৃতিতে গ্রামের মেলা জড়িয়ে নেই, এটা হতেই পারে না। গ্রামের শান্ত নিথর জীবনে গ্রামীণ মেলা যেন আনন্দের বন্যা নিয়ে হাজির হয়। দৈনন্দিন জীবনের গণ্ডির বাইরে মেলা যেন একটা দমকা হাওয়া। যেখানে হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা। মানুষে মানুষে মিলবার জাত-পাত, ধর্মীয় পরিচয় পেছনে ফেলে এমন মিলবার জায়গা আর কোথায়? বাংলার এই মেলা ছাড়া! আর মেলা উপলক্ষে কুটুম স্বজন আসার কমতি থাকে না গ্রামের প্রতিটি বাড়ীতে বাড়ীতে যেন আনন্দের বন্ধ্যা শিশু কিশোরদের হৈ হুল্লোড় মুখর হয়ে হঠে আসপাশের এলাকা। মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) উপজেলার আত্রাই নদীর কোলঘেষা যতনী পতনী মন্দির চত্বরে সকাল হতে শুরু হয় লোকজনের আগমন এবং সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত পর্যন্ত চলে এ গ্রামীণ মেলা। এলাকর প্রবীণ ব্যক্তিদের মতে ১২৮০ বঙ্গাব্দ হতে ধারাবাহিকভাবে প্রায় দেড়শ বছর ধরে নজিপুর পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড মামুদপুর গ্রামে হয়ে আসছে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ এ মেলা। হিন্দু শাস্ত্রের তিথি নক্ষত্র অনুযায়ী দ্বীপাবলি বা কালী পূজা উপলক্ষে প্রতিবছর বসে এই মেলা। করোনার কারনে গত কয়েক বছর মেলা তেমন ভাল বসেনি তবে এবারের মেলা জমেছে বেশ চমৎকার ভাবে। এই মেলাকে ঘিরে গ্রামীণ মানুষের মধ্য এক অন্য রকম উৎসব আমেজে মুখোর হয়ে ওঠেছে আসপাশের ১০/১২ টি গ্রাম। বাড়িতে বাড়িতে আনন্দ উল্লাস। গৃহিনীদের নিত্য প্রয়োজনীয় ধানচালা কুলা, চালুনি, ডালা হাঁসুয়া বটি পাতিল সহ ইত্যাদি ক্রয় করেন। গ্রামের প্রতিটি বাড়ীতেই জামাই মেয়ে সহ বিভিন্ন আত্মীয় স্বজন আসা, চলে খাওয়া দাওয়ার ধুমও। পোলাও, পাটিসাপটা,দুধকুসলি, কানমুচরি,পাকোয়ান পিঠা, রস পিঠা সহ নানান পিঠাপুলি মিষ্টি মিঠাই খাওয়ার ধুম। নিতান্ত গরীব হলেও ১ কেজি জিলাপি কিনবেই। এক দিনের এ মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন এলাকা থেকে দোকানীরা আগের দিন এসে দোকানে মিষ্টি, বাঁশ, বেত, মাটির তৈরী নকশি পাতিল, মাটির ব্যাংক, পুতুল , কাঠের তৈরী ফার্নিচার, কসমেটিক, খেলনা, বাশি,বেলুন, ঘুর্নি, লোহার তৈরী হাঁসুয়া বটি, চাকু,কাগজের ফুল নানা রকম মুখরোচক খাবারেরর দোকান দিয়ে নানান জিনিসপত্রের পশরা সাজিয়ে বসেন। শ্রী নিতাই কুমার পাল নামের এক দোকানি জানান, র্দীঘ ৫০ বছর ধরে এই মেলাতে মাটির তৈরি তৈজসপত্র বিক্রি করে আসছি। শুরুর দিকে আমার দাদু এই মেলাতে মাটির তৈরি তৈজসপত্র বিক্রি করতেন। এরপর আমার বাবা অমুল্য চরন পাল তারপর আমি এসব বিক্রি করছি। এখানে মাটির তৈরী হাড়ি,পাতিল, ঢাকোন, প্রদীপ দেওয়া ছোট বাটি, ধুপ জালানো ধুপতীসহ নানা রকম মাটির তৈরি তৈজসপত্র বিক্রি করি আমরা। মেলাতে বাশেঁর তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করতে আসা রেবেকা পাহান জানান, সারা বছর আমাদের খুব কষ্টে দিন কাটে। এই সময়টা আমরা বাশেঁর তৈরী বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করি। মেলাতে আমরা বাশেঁর তৈরী কুলা, ঢাকনা, ঝাল ডালা,খইচালা, চালুন, মাছ রাখা খলইসহ বাশেঁর তৈরী নানা উপকরণ বিক্রি করি। প্লাস্টিকের পণ্য বাজারে আসায় আমাদের আয় কমে গেছে। স্থানীয় রতন হালদার ,মানিক,শুশান্তসহ অনেকেই জানান, আসলে এই মেলা কবে থেকে শুরু হয়েছে তা সঠিক বলা মুসকিল তবে বাবা দাদার হাত ধরে খুব ছোট থেকে এ মেলায় আসছি। বছরের এই এক দিনের জন্য মেলা হয়। মেলাতে এই এলাকার পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষেরা আসেন। এখানে সারা বছরের সংসারের প্রয়োজনীয় নানা রকম জিনিসপত্র পাওয়া যায়। মানুষেরা এগুলো কিনে সারাবছরই ব্যবহার করে থাকেন। মেলার এক পাশে চলে ‘বউ মেলা’। বউ মেলায় বিশেষ করে নারীদের কসমেটিক দোকান গুলোতে উপচে পড়া ভীড়। আশপাশের কয়েকটি গ্রামের শত শত নারীদের বউ মেলায় আগমন ঘটে। মেলা দেখতে আসা চৌরাট শিবপুর বরেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ বাবু দিপক কুমার সরকার বলেন আমার জানামতে পাকিস্তান প্রিয়ড থেকে যুগ যুগ ধরে এই মেলা হয়ে আসছে এখানে যতনী পতনী নামে দুটা কালি ছিল, যতনী ইন্ডিয়া গেছে আর পতনী এখানে আছে । এখানে জাতি ধর্ম বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে সকল মানুষের পদচারনা হয়। আমি আশা করবো আগামীতেও এভাবে সৌহার্দ্য সম্প্রিতির মেলবন্ধনে আরও বড় উৎসব হোক। নজিপুর মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ও মেলা কমিটির সভাপতি বাবু দিলিপ কুমার মন্ডল জানান, বিগত ১০ বছর যাবত আমি কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি, মেলার জন্য কোন চাঁদা কালেকশন করা হয় না মানুষ স্ব ইচ্ছায় যে যা দেয় তাতেই হয়ে যায়, মজার বিষয় সৃষ্টি কর্তার কি মহিমা মানুষ যা টাকা দেন হিসাব অনুযায়ী টাকা বেশী হবেই।১২৮০ সালে এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয় সেই থেকেই এখানে মেলা বসে, মূলত দ্বীপাবলি উৎসবকে কেন্দ্র করে আমরা এই মেলার আয়োজন করে থাকি। এ দিন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা কালি পুজা অর্চনা করেন এখানে। ধর্ম বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ আসেন এ মেলায়।

এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা

© All rights reserved © 2022 Daily Naogaonnews
Theme Customized By Shakil IT Park