আসাদুজ্জামান,নওগাঁঃ উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁতে জানান দিচ্ছে শীতের আগামনী বার্তা। এ জেলায় দিনের বেলায় তেমন একটা ঠান্ডা অনুভব না হলেও গভীর রাত এবং সকালে সূর্য ওঠার আগ পর্যন্ত বোঝা যাচ্ছে শীতের আমেজ। বাংলার ঘরে ঘরে শীতকাল মানেই অনেকটা পিঠাপুলির উৎসব। শীতের মৌসুমের সময়গুলোতে তৈরি হয় নানা রকম পিঠা। আর সেই পিঠার মধ্যে অন্যতম উপাদান হচ্ছে খেজুর রসের লালি ও গুড়। শুধু কি তাই? খেজুর রস দিয়ে তৈরি গুড়ের রসগোল্লা, পায়েস, মোয়া ও সন্দেশ যেন অন্য রকম তৃপ্তি এনে দেয় মুখে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। চলছে গাছ তৈরি ও নলি বসানোর কাজ। খেজুরের রস সংগ্রহে গাছ তৈরিতে তাই শীতের শুরুতে দম ফেলার মত যেন সময় নেই গাছিদের। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় ১৭০ হেক্টর জমিতে খেজুরগাছ রয়েছে। চলতি বছর এসব গাছ থেকে গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৬০ টন। জেলার বিভিন্ন এলাকা গুরে দেখা যায়, জমির আইল, রাস্তার পাশে এমনকি পুকুর পাড়ে সারি- সারি খেজুর গাছের ডাল কেটে পরিষ্কার করছেন। হাতে দা, কোমরে রশি বেঁধে নিপুণ হাতে গাছ তৈরি করছেন গাছিরা। এরই মধ্যে অনেকে রস সংগ্রহের জন্য গাছে নলি গাঁথাও শুরু করেছেন। গাছিরা বলছেন, আর মাত্র ১০-১৫ দিন পরই রস পাওয়া শুরু হবে। খেজুরগাছ থেকে রস পাওয়ার জন্য তৈরি করাকে তারা আঞ্চলিকভাবে ‘গাছ তোলা’ বলে থাকেন। প্রথমবার গাছ তোলার সাত দিন পরই হালকা কেটে নলি লাগানো হয়। পরে সেখান থেকে রস সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। নওগাঁ সদর উপজেলার বর্ষাইল গ্রামের গাছি তোজাম্মেল হোসেন বলেন, এবার ১৫টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করবো। খেঁজুর গাছগুলো আমার নিজের। সকল প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। এখন অপেক্ষা রস সংগ্রহের।রাণীনগর উপজেলার নওদুলি গ্রামের গাছি সুসান্ত কুমার বলেন, ২০টি গাছ থেকে এবার রস সংগ্রহ করবো। নিজের ১০টি গাছ আর ১০টি গাছ চুক্তি করে নিয়েছি একজন গাছ মালিকের কাছে থেকে। প্রতি গাছ থেকে মালিককে দিতে হবে ৭কেজি করে লালি। একটি খেজুরগাছ থেকে প্রতিদিন চার কেজির মতো রস পাওয়া যায়। আর ছয় কেজি রস থেকে ১ কেজি গুড় পাওয়া যায়। লালির ক্ষেত্রে ৩ কেজি রসে মেলে ১ কেজি। বদলগাছী উপজেলার ভান্ডারপুর গ্রামের গাছি রবিউল ইসলাম বলেন, ৩০টি গাছ একজন মালিকের কাছ থেকে নিয়েছি। মালিককে এক সিজনের জন্য দিতে হবে ১৫ হাজার টাকা। জ্বালানিসহ আমার প্রতিদিন খরচ হবে প্রায় ৪০০ টাকার মতো। তিনি আরো বলেন, গত বছর গুড় বিক্রি করেছিলাম ৮০ টাকা কেজিতে। আর লালি ৭০-৭৫ টাকা কেজি দরে। এবার যদি সেই রকম দাম থাকে তবে প্রতিদিন৭০০-৮০০ টাকার মতো করে লাভ করতে পারব সবখরচ বাদ দিয়ে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর উপ-পরিচালক মোঃ আবু হোসেন বলেন,জেলায় ১৭০ হেক্টর জমিতে খেজুরগাছ রয়েছে। সেই হিসাবে গাছের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৭ হাজারের মতো। চলতি বছর ৮৭০ টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।তবে গত বছরের চেয়ে এবার গাছের সংখ্যা কিছুটা কমেছে। কৃষি অফিস থেকে গাছিদের মাঠপর্যায়ে খেজুরগাছ থেকে রস লামানের লালি বা গুড় উৎপাদনের বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। মাঠ পর্যায়ে উপসহকারি কৃষি র্কমকর্তারা নানাভাবে গাছিদের পরামর্শ দিচ্ছেন।